স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দ চেনার উপায় কি?
Posted By:
Mostafa Kamal
Researcher of DCPL
& BDTP / Ph.D (Study)
Affiliated Ph.D
Researcher of IOUT & Academic Associate of
Shikshakendra, Hati
More, Subash Pally, Siliguri, W.B. INDIA
Chairman of Dynamic
Youth Society, Public Library & Study Center.
Address: Samsabad,
P.S.- Panchbibi, Dist. Joypurhat, N.B. BANGLADESH.
Contact : +88-01911
450 131; E-mail:aboutdynamic@gmail.com
কাব্যসাহিত্যে ছন্দ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আগে ‘মাত্রার’ ধারণা থাকা প্রয়োজন । মাত্রা : কাব্যে গতির সমতা রক্ষাকে
"মাত্রা" বলে। মাত্রা সময় নিরূপক নির্দেশনা । কোন অক্ষরে কত সময় স্বর অবস্থান করবে , মাত্রায় তা উল্লেখ থাকে। আবৃত্তির ক্ষেত্রে মাত্রা অপরিহার্য। সময়ের পরিমাণ মাত্রা দিয়েই বোঝান হয়। সঙ্গীতে যেমন : ধা। ধিন। ধিন। ধা। =৪ মাত্রা। তেমনি কাব্যে , ছিপ।খান। তিন।দাঁড় । তিন।জন ।মাল। লা । = ৮ মাত্রা । অক্ষর বলতে , আমরা একসঙ্গে কোন বর্ণে কতটা সময় অবস্থান করি----তার উপর নির্ভর করে ধরা হয় । অক্ষর অনেকটা ইংরেজী ‘সিলেবল’য়ের মত । অক্ষর আর বর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা । যেমন ,ক+ল+ম-----এখানে বর্ণ আছে তিনটি কিন্তু যখন শব্দটা উচ্চারণ করি তখন বলি—ক+ লম ,অর্থাৎ অক্ষর এখানে দুইটি । একটি মুক্তাক্ষর এবং অন্যটি যুক্তাক্ষর না বদ্ধাক্ষর । সাধারণত কবিতা লেখা হয় পয়ারের ছন্দে । পয়ার ৮+৬ =১৪ মাত্রার দুইটি পর্ব বিশিষ্ট পদ বা চরণ । প্রতি দুই চরণে অন্ত্যমিল থাকে । কবিতায় ছন্দ তিন প্রকার । তাদের নাম,( ১) স্বরবৃত্ত , মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত । স্বরবৃত্ত ছন্দে , যুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , এবং মুক্তাক্ষরও ১ মাত্রা। যেমন , মা। কেঁ । দে। কয়। মন। জু। লি। মোর। + ওই। তো। ক।চি।মে।য়ে। = ১৪ মাত্রা। (২) মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ---মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা আর যুক্তাক্ষর ২মাত্রা। যেমন, “একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে , ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী !” এটা এইভাবে দেখানো হলোঃ এ।ক। টি। ক।থা।র/ দ্বি। ধা । থ। র।থ।র।চূ।ড়ে/ ভ।র। ক।রে। ছি।ল / সা।ত।টি / অ।ম।রা।ব। তি/ (৩) অক্ষরবৃত্ত ছন্দে
----মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , যুক্তাক্ষর—শব্দের প্রথমে ও মাঝে ১ মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে যুক্তাক্ষর ২ মাত্রা । যেমন , হে। বং।গ/ ভান।ডা।রে। ত।ব/ বি।বি।ধ/ র।ত।ন/ ==ভান-- যুক্তাক্ষর ,শব্দের প্রথমে বলে ১ মাত্রা। কিন্তু রতনের ‘তন’ শব্দের শেষে বলে --২মাত্রা । প্রায় সব কবিরাই স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতা লেখেন। আমাদের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন ।
======================================
মাত্রাবৃত্তে মাত্রা গণনা :
অক্ষরবৃত্তে আমরা মোটের ওপর (কিছু ব্যতিক্রম আগেই উল্লেখ করেছি) যত অক্ষর তত মাত্রা এই ফর্মুলায় চলেছি। যুক্তাক্ষরকেও এখানে আমরা ১ মাত্রা দিয়েছি। তবে মাত্রাবৃত্তে যুক্তাক্ষরকে কিন্তু পূর্ণ মূল্য দিতে হবে, অর্থাৎ ২ মাত্রা দিতে হবে। অনেকেই তাই মাত্রাবৃত্তকে ‘যুক্তাক্ষর ভাঙা ছন্দ’ বলে অভিহিত করেন। একটা উদাহরন দেই–‘কষ্ট ’ শব্দটি অক্ষরবৃত্তে ২ মাত্রা, কিন্তু মাত্রাবৃত্তে ভেঙে গিয়ে হবে ‘ক ষ্ ট’ – ৩ মাত্রা। বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়? আরেকটা বলি- ‘ছন্দ’ অক্ষরবৃত্তে ২ মাত্রা, আর মাত্রাবৃত্তে ৩ মাত্রা (ছ ন্ দ )।
তবে এখানেও একটা ব্যতিক্রম মনে রাখতে হবে। তা হচ্ছে শব্দের প্রথমে কোন যুক্তাক্ষর থাকলে সেটা ভাঙা সম্ভব নয়, সে কারনে মাত্রাবৃত্তেও সে ১ মাত্রাই পাবে। বোঝেন নি? ধরুন ‘ক্লাস’ শব্দটি। এটি কিন্তু অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত দুই ছন্দেই ২ মাত্রা পাবে। কারণ শব্দের শুরুতেই যুক্তাক্ষর ‘ক্ল’ কে ভাঙা যাচ্ছেনা। সুতরাং সোজা কথা মনে রাখুন —-শব্দের আদি অক্ষর যদি যুক্তাক্ষর হয় , তাহলে ১ মাত্রা হবে । যেমন —- ক্ল , ক্র , দ্র এমন দইটি বা তিনটি বর্ণের অক্ষরও ১ মাত্রা পাবে ।
তাহলে সোজা কথায় আমরা জানলাম- শব্দের মাঝখানে অথবা শেষের যুক্তাক্ষরকে আমরা মাত্রাবৃত্তে ২ মাত্রার মর্যাদা দেব, আবারও বলি শব্দের প্রথমে যুক্তাক্ষর থাকলে ১ মাত্রা-ই দেব।
যুক্তাক্ষরের বাড়তি বোঝা নিয়ে অক্ষরবৃত্ত যদি হাতির চালে চলে, মাত্রাবৃত্ত চলে তেজী ঘোড়ার মতো।
অক্ষরবৃত্ত জোড়া দিতে চায়, মাত্রাবৃত্ত চায় ভাঙতে।
=================================================
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ (কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ) বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত প্রধান তিনটি ছন্দের একটি। অন্য দুটি হলো স্বরবৃত্ত ছন্দ এবং অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাগুলোর মূলপর্ব ৪, ৫, ৬, ৭ মাত্রার হতে পারে।
বৈশিষ্ট্য
•
মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়।
•
অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়।
•
কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত।
নামকরণ
প্রাচীনতম এ বাংলা ছন্দকে রবীন্দ্রনাথ নাম দিয়েছেন 'সংস্কৃতভাঙা'। মোহিতলাল মজুমদার ডেকেছেন 'সাধুভাষার পর্বভূমক' বলে'। প্রবোধচন্দ্র সেন দিয়েছেন অনেক নাম - 'কলাবৃত্ত', 'সরলকলামাত্রিক' ও 'মাত্রাবৃত্ত'। পরবর্তীতে 'মাত্রাবৃত্ত' নামটিই ব্যবহৃত হয় বেশি।
ছন্দ বিশ্লেষণ
এইখানে তোর / দাদির কবর / ডালিম-গাছের ∣
তলে ৬+৬+৬+২
তিরিশ বছর / ভিজায়ে রেখেছি / দুই নয়নের ∣
জলে ৬+৬+৬+২
কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।
এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-
প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)।
দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা।
তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা।
চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা।
=======================================================
কাব্যসাহিত্যে ছন্দ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আগে ‘মাত্রার’ ধারণা থাকা প্রয়োজন । মাত্রা : কাব্যে গতির সমতা রক্ষাকে
"মাত্রা" বলে। মাত্রা সময় নিরূপক নির্দেশনা । কোন অক্ষরে কত সময় স্বর অবস্থান করবে , মাত্রায় তা উল্লেখ থাকে। আবৃত্তির ক্ষেত্রে মাত্রা অপরিহার্য। সময়ের পরিমাণ মাত্রা দিয়েই বোঝান হয়। সঙ্গীতে যেমন : ধা। ধিন। ধিন। ধা। =৪ মাত্রা। তেমনি কাব্যে , ছিপ।খান। তিন।দাঁড় । তিন।জন ।মাল। লা । = ৮ মাত্রা । অক্ষর বলতে , আমরা একসঙ্গে কোন বর্ণে কতটা সময় অবস্থান করি----তার উপর নির্ভর করে ধরা হয় । অক্ষর অনেকটা ইংরেজী ‘সিলেবল’য়ের মত । অক্ষর আর বর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা । যেমন ,ক+ল+ম-----এখানে বর্ণ আছে তিনটি কিন্তু যখন শব্দটা উচ্চারণ করি তখন বলি—ক+ লম ,অর্থাৎ অক্ষর এখানে দুইটি । একটি মুক্তাক্ষর এবং অন্যটি যুক্তাক্ষর না বদ্ধাক্ষর । সাধারণত কবিতা লেখা হয় পয়ারের ছন্দে । পয়ার ৮+৬ =১৪ মাত্রার দুইটি পর্ব বিশিষ্ট পদ বা চরণ । প্রতি দুই চরণে অন্ত্যমিল থাকে । কবিতায় ছন্দ তিন প্রকার । তাদের নাম,( ১) স্বরবৃত্ত , মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত । স্বরবৃত্ত ছন্দে , যুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , এবং মুক্তাক্ষরও ১ মাত্রা। যেমন , মা। কেঁ ।দে। কয়। মন। জু। লি। মোর। + ওই। তো। ক।চি।মে।য়ে। = ১৪ মাত্রা। (২) মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ---মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা আর যুক্তাক্ষর ২মাত্রা। যেমন, “একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে , ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী !” এটা এইভাবে দেখানো হলোঃ এ।ক।টি। ক।থা।র/ দ্বি। ধা । থ।র।থ।র।চূ।ড়ে/ ভ।র। ক।রে।ছি।ল / সা।ত।টি / অ।ম।রা।ব।তি/ (৩) অক্ষরবৃত্ত ছন্দে ----মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , যুক্তাক্ষর—শব্দের প্রথমে ও মাঝে ১ মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে যুক্তাক্ষর ২ মাত্রা । যেমন , হে। বং।গ/ ভান।ডা।রে।ত।ব/ বি।বি।ধ/ র।ত।ন/ ==ভান-- যুক্তাক্ষর ,শব্দের প্রথমে বলে ১ মাত্রা। কিন্তু রতনের ‘তন’ শব্দের শেষে বলে --২মাত্রা । প্রায় সব কবিরাই স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতা লেখেন। আমাদের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন ।
===============================================
মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ
সাধারণত গীতিকবিতা গুলো
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের
হয়ে
থাকে।
যে
সকল
কবিতায়, বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা এবং
মুক্তাক্ষরে একমাত্রা হয়,
তাদের
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের
কবিতা
বলে।
বদ্ধাক্ষরেও যে
দুই
মাত্রা
হয়,
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
তার
প্রমাণ। এখানে
বদ্ধাক্ষর, মুক্তাক্ষরের আগে,
মধ্যে
বা
পরে
যেখানেই থাকুক
না
কেন,
বদ্ধাক্ষরে দুই
মাত্রা
হবে।
আচ্ছা
বলুনতো,
যদি
বদ্ধাক্ষরে একমাত্রা হত
তাহলে
কি
হত
? ভুলে
গেলে
আগের
পৃষ্টা
গুলো
আবার
পড়ুন,
আর
যদি
সে
ধৈর্য্য না
থাকে,
তাহলে
আমার
সাথে
এগিয়ে
চলুন।
তাহলে,
এক্ষেত্রে হবে
স্বরবৃত্ত ছন্দ।
আগের
কথাগুলো আপনাদের সুবিধার্থে আরও
একবার
আলোচনা
করে
নিলাম।
আমার
মনে
হয়,
আপনারা
স্বববৃত্ত ও
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের
পার্থক্য বুঝতে
পেরেছেন। তাহলে
চলুন,
আমরা
একটা
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের
কবিতা
দেখি।
যেমন,
পল্লী
কবি
জসীমুদ্দীনের ‘‘কবর”
কবিতাটি দেখতে
পারি।
এটি
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের
কবিতা।
‘‘ঐ খানে তোর
দাদির
কবর
ডালিম গাছের
তলে
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি
দুই
নয়নের
জলে”।
কবিতা
তো
দেখা
হল,
এখন
কাজ
কী
? চলুন
বিশ্লেষণ করি।
।। । । ।। । ।। । ।।
ওই খা নে
তোর
/ দা
দির
ক
বর
/
।
।।
।
।।
।
।
ডা
লিম্
গা
ছের
/ ত
লে
/
। ।। । ।। । । । । । ।
তি রিশ ব
ছর
/ ভি
জা
য়ে
রে
খে
ছি
/
।।
।।
।।
।
।
দুই
নয়
নের
/ জ
লে
/
দেখুন,
এখানে
বদ্ধাক্ষরেও দুই
মাত্রা
পরেছে।
শুধু
তাইনা,
আরও
খেয়াল
করে
দেখুন
কোথাও
কোথাও
বদ্ধাক্ষর মুক্তাক্ষরের আগে
আবার
কোথাও
কোথাও
পরে।
কিন্তু,
মজার
বিষয়
হল,
উভয়
ক্ষেত্রেই দুইমাত্রা পরেছে।
এটিই
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের
প্রধান
বৈশিষ্ট্য।