শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
Posted By:
Mostafa Kamal
Researcher of DCPL
& BDTP / Ph.D (Study)
Affiliated Ph.D
Researcher of IOUT & Academic Associate of
Shikshakendra, Hati
More, Subash Pally, Siliguri, W.B. INDIA
Chairman of Dynamic
Youth Society, Public Library & Study Center.
Address: Samsabad,
P.S.- Panchbibi, Dist. Joypurhat, N.B. BANGLADESH.
Contact : +88-01911
450 131; E-mail:aboutdynamic@gmail.com
নিত্য দিনকার কাজের ব্যস্ততার
মাঝে দিন চারেক আগের এক বিকেলে একটা কল এলো। নাম্বারটি অপিরিচিত- ধরবো কী ধরবো না করে
কলটি রিসিভ করলাম। অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে এলো একটি নারীকণ্ঠ। ম্যাডাম আমি আপনার
ছাত্রী ছিলাম। নাম শুনে চিনতে পারলাম না। ও বললো, দেখলে চিনবেন। ওকে বললাম, কী
বলবে বলো। ও জানালো একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কথা-সাক্ষাতে বলতে চায়। তাকে একটা সময়
দিলাম ও এলো এবং জানালো ওর জীবনের একান্ত নিজস্ব কথা- যা শুনে আমি প্রথমত বাকরুদ্ধ
হয়ে যাই। মেয়েটি ভালো ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করার পূর্বেই
বাবা-মা তাকে বিয়ে দেন কোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সাথে। ওদের
একটি কন্যা সন্তান আছে এক বছর বয়সের। শিক্ষক স্বামী তাকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়
তার ছেলে সন্তান চাই। সে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য গেছে। ওকে বাবা-মা পাঠায়
সেখানে। কিন্তু বিধি বাম। স্বামী নানা নির্যাতনের সাথে শারীরিক অত্যাচার করে এবং
তাকে সেখানে শ্রমিকের কাজ করতে প্ররোচিত করে। অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপনে তাকে
বাধ্য করে। নিরুপায় হয়ে সে ফিরে আসে বাবা-মার কাছে। কোনো যোগাযোগ নেই তাদের। একথাও
সে জানায়, তোমাকে এখন আর আমার ভালো লাগে না। বাড়িতে ভাই-ভাইজি তাকে পছন্দ করে না,
বাবা-মা ছেলেকে কিছু বলে না কারণ সেই তাদের বৃদ্ধ বয়সের আশ্রয়দাতা। বাবা-মা উচ্চ
শিক্ষিত হলেও প্রকৃত শিক্ষা সন্তানকে দিতে পারেন নি।
আমাদের দেশে অনেক বাবা-মাই সন্তানকে শিক্ষা দেন- শুধুমাত্র বইপড়ে ভালো রেজাল্ট করার জন্য। মেয়েটিও করেছিল। যদি তাকে শিক্ষা জীবন শেষ করে স্বাবলম্বী করে অর্থাৎ কোনো চাকরির ব্যবস্থা করে বিয়ে দিতেন তাহলে তাদের আজ এ দিনটা দেখতে হতো না। স্বাধীনভাবে তার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার বিকাশে যদি সাহায্য করতেন তাহলে সে স্বাবলম্বী হয়ে আরো অনেকের অবলম্বন হতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেই সে খুব বড় মানুষ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার সময়ে যখন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছেলে সন্তান দাবি করেন তাহলে সহজেই ভেবে নেওয়া যায় সে শুধু বই পড়েছে এবং পড়ার জোরে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে- প্রকৃত শিক্ষা তার ভেতরে নেই। যে শিক্ষা মানুষকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখে, যে শিক্ষা মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় না, যে শিক্ষা বাস্তবতাবিরোধী, যে শিক্ষায় মানবিকতার স্থান নেই, যে শিক্ষায় উদারতা নেই, যে শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান হতে শেখায় না- সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই।
মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সংঘবদ্ধ জীব- তাই সে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করে, গড়ে তোলে নানা সংগঠন কিংবা নিজেকে সম্পৃক্ত করে নানা সংগঠনের সাথে। মানুষের নিজস্ব চিন্তা- চেতনা যুক্ত হয় নানা মানুষের সাথে। এভাবে একজন একক মানুষের ক্ষুদ্র সত্ত্বা অনেকের সাথে যুক্ত হয়ে বিরাট মহীরুহে পরিণত হয়- যার শুভ শক্তি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে বৃহত্তর মানুষের কল্যাণে। আমরা যদি শুধু নিজেকে নিয়ে নিমগ্ন না থেকে অন্যের ভালো-মন্দের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারি তাহলে কখনো নিজকে একা মনে হবে না, অসহায় মনে হবে না।
একজন মানুষ চায় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা হীনতায় কেউই বাঁচতে চায় না। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, যা ইচ্ছে তাই করা। স্বাধীনতার অর্থ সমাজের অনুশাসন মেনে (যদি কুসংস্কারাচ্ছন্ন না হয়) মুক্তভাবে কিছু করা- যা একজন মানুষের অন্তর্নিহিত সৃষ্টিশীলতার বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষ তথা সমাজের মঙ্গল বয়ে আনে। যে মানুষ স্বাধীন সে সব সময় শুধুমাত্র ভালোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা নয়- তিনি বা তাঁরাও কখনও কখনও পথভ্রষ্ট হতে পারেন। কিন্তু পার্থক্য এই স্বাধীন মানুষ বিপদে হতোদ্যম হন না- পরাধীন মানুষের মতো। ভালো-মন্দের ভেতর দিয়েই তারা জীবনের প্রকৃত সত্যকে উদঘাটন করতে শেখে এবং সাহসের সাথে সব বাধা-বিঘœ অতিক্রম করতে শেখে। তাই কবিগুরু তাঁর বঙ্গমাতা কবিতায় লিখেছেন-
প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ সাথে।
সমাজে নানা ধরনের মানুষ বাস করে। এসব মানুষের সাথে তাকে চলতে শিখতে হবে। হয়তো সব কিছু নিজের মনের মতো হবে না। তাই বলে তাকে যদি নানা নিষেধের বেড়াজালে আটকে রাখা হয়, তাহলে বিশ্ব সংসারে তার যোগ্য জায়গাটি সে অলঙ্কৃত করতে পারবে না। শুধুমাত্র ভালো ছেলে হলে তো চলবে না। ভালো ছেলের ভালো কাজ সবার সাথে ভাগ করে নিতে হবে। শুধুমাত্র নিজে ভালো হলেই তো চলবে না। নিষেধের ডোরে না বেধে সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
পদে পদে ছোটে ছোটো নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে করে। (বঙ্গমাতা)
সন্তানকে যদি আদর্শবান করে গড়ে তোলা না যায়, নিঃস্বার্থ হতে শেখানো না যায়, তাকে যদি সবার সাথে এবং সবার জন্য শিক্ষা দেওয়া না যায় তাহলে সে কখনো নিজের মঙ্গল ছাড়া অন্যের মঙ্গল করতে শিখবে না এবং সেটি কখনো কাম্য হতে পারে না। শিক্ষা অবশ্যই যুগোপযোগী এবং আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। একজন শিক্ষিত মানুষ যদি অন্যের কাছে কোনো আদর্শ স্থাপন করতে না পারে তাহলে তার শিক্ষা সার্বজনীন হয় না। অন্ধ বিশ্বাস বা ধ্যান-ধারণা কিংবা কুপমন্ডুকতা মানুষকে গ-িবদ্ধ করে ফেলে-এ গ-ি থেকে বেরিয়ে উদার ও বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে এ শিক্ষা দিলে দেশ-জাতি উপকৃত হবে। আর্থিক স্বাবলম্বন প্রত্যেকটি মানুষের অবশ্যই মৌলিক অধিকার- এটি সমাজে নিজের পরিচয়কে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত করে। সাহসের সাথে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার শিক্ষা অর্জনের জন্য স্বাধীন, সার্বজনীন, সংগঠিত ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন অপরিহার্য।
আমাদের দেশে অনেক বাবা-মাই সন্তানকে শিক্ষা দেন- শুধুমাত্র বইপড়ে ভালো রেজাল্ট করার জন্য। মেয়েটিও করেছিল। যদি তাকে শিক্ষা জীবন শেষ করে স্বাবলম্বী করে অর্থাৎ কোনো চাকরির ব্যবস্থা করে বিয়ে দিতেন তাহলে তাদের আজ এ দিনটা দেখতে হতো না। স্বাধীনভাবে তার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার বিকাশে যদি সাহায্য করতেন তাহলে সে স্বাবলম্বী হয়ে আরো অনেকের অবলম্বন হতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেই সে খুব বড় মানুষ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার সময়ে যখন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছেলে সন্তান দাবি করেন তাহলে সহজেই ভেবে নেওয়া যায় সে শুধু বই পড়েছে এবং পড়ার জোরে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে- প্রকৃত শিক্ষা তার ভেতরে নেই। যে শিক্ষা মানুষকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখে, যে শিক্ষা মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় না, যে শিক্ষা বাস্তবতাবিরোধী, যে শিক্ষায় মানবিকতার স্থান নেই, যে শিক্ষায় উদারতা নেই, যে শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান হতে শেখায় না- সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই।
মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সংঘবদ্ধ জীব- তাই সে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করে, গড়ে তোলে নানা সংগঠন কিংবা নিজেকে সম্পৃক্ত করে নানা সংগঠনের সাথে। মানুষের নিজস্ব চিন্তা- চেতনা যুক্ত হয় নানা মানুষের সাথে। এভাবে একজন একক মানুষের ক্ষুদ্র সত্ত্বা অনেকের সাথে যুক্ত হয়ে বিরাট মহীরুহে পরিণত হয়- যার শুভ শক্তি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে বৃহত্তর মানুষের কল্যাণে। আমরা যদি শুধু নিজেকে নিয়ে নিমগ্ন না থেকে অন্যের ভালো-মন্দের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারি তাহলে কখনো নিজকে একা মনে হবে না, অসহায় মনে হবে না।
একজন মানুষ চায় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা হীনতায় কেউই বাঁচতে চায় না। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, যা ইচ্ছে তাই করা। স্বাধীনতার অর্থ সমাজের অনুশাসন মেনে (যদি কুসংস্কারাচ্ছন্ন না হয়) মুক্তভাবে কিছু করা- যা একজন মানুষের অন্তর্নিহিত সৃষ্টিশীলতার বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষ তথা সমাজের মঙ্গল বয়ে আনে। যে মানুষ স্বাধীন সে সব সময় শুধুমাত্র ভালোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা নয়- তিনি বা তাঁরাও কখনও কখনও পথভ্রষ্ট হতে পারেন। কিন্তু পার্থক্য এই স্বাধীন মানুষ বিপদে হতোদ্যম হন না- পরাধীন মানুষের মতো। ভালো-মন্দের ভেতর দিয়েই তারা জীবনের প্রকৃত সত্যকে উদঘাটন করতে শেখে এবং সাহসের সাথে সব বাধা-বিঘœ অতিক্রম করতে শেখে। তাই কবিগুরু তাঁর বঙ্গমাতা কবিতায় লিখেছেন-
প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ সাথে।
সমাজে নানা ধরনের মানুষ বাস করে। এসব মানুষের সাথে তাকে চলতে শিখতে হবে। হয়তো সব কিছু নিজের মনের মতো হবে না। তাই বলে তাকে যদি নানা নিষেধের বেড়াজালে আটকে রাখা হয়, তাহলে বিশ্ব সংসারে তার যোগ্য জায়গাটি সে অলঙ্কৃত করতে পারবে না। শুধুমাত্র ভালো ছেলে হলে তো চলবে না। ভালো ছেলের ভালো কাজ সবার সাথে ভাগ করে নিতে হবে। শুধুমাত্র নিজে ভালো হলেই তো চলবে না। নিষেধের ডোরে না বেধে সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
পদে পদে ছোটে ছোটো নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে করে। (বঙ্গমাতা)
সন্তানকে যদি আদর্শবান করে গড়ে তোলা না যায়, নিঃস্বার্থ হতে শেখানো না যায়, তাকে যদি সবার সাথে এবং সবার জন্য শিক্ষা দেওয়া না যায় তাহলে সে কখনো নিজের মঙ্গল ছাড়া অন্যের মঙ্গল করতে শিখবে না এবং সেটি কখনো কাম্য হতে পারে না। শিক্ষা অবশ্যই যুগোপযোগী এবং আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। একজন শিক্ষিত মানুষ যদি অন্যের কাছে কোনো আদর্শ স্থাপন করতে না পারে তাহলে তার শিক্ষা সার্বজনীন হয় না। অন্ধ বিশ্বাস বা ধ্যান-ধারণা কিংবা কুপমন্ডুকতা মানুষকে গ-িবদ্ধ করে ফেলে-এ গ-ি থেকে বেরিয়ে উদার ও বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে এ শিক্ষা দিলে দেশ-জাতি উপকৃত হবে। আর্থিক স্বাবলম্বন প্রত্যেকটি মানুষের অবশ্যই মৌলিক অধিকার- এটি সমাজে নিজের পরিচয়কে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত করে। সাহসের সাথে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার শিক্ষা অর্জনের জন্য স্বাধীন, সার্বজনীন, সংগঠিত ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন অপরিহার্য।