সৈয়দ মুজতবা আলী

সৈয়দ মুজতবা আলী (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ - ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) একজন বিংশ শতকী বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। তিনি তাঁর ভ্রমণকাহিনীর জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট।
জন্ম
সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জেপিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তাঁর পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার, সিলেট।
শিক্ষাজীবন
সিলেটের গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পিতার বদলির চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ইতালীয় ভাষাশিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এখান থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩৪-১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবন
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষাদপ্তরে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।
লেখালেখি
শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শীপ্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন : দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন। তাঁর বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমনকাহিনী। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হল, "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।" তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০।
প্রকাশনা
ভ্রমণকাহিনী
উপন্যাস
ছোটগল্প
রম্যরচনা
1.    দেশে বিদেশে (১৯৪৯) (কাবুল শহরের কাহিনী নিয়ে লেখা।)
2.   জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০)
1.    অবিশ্বাস্য (১৯৫৪)
2.   শবনম (১৯৬০)
3.   শহরইয়ার (১৯৬৯)
1.    চাচা কাহিনী (১৯৫২)
2.   টুনি মেম (১৯৬৪)
3.   "পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২)
4.   "ময়ূরকন্ঠী (১৯৫৭)
2.   ময়ূরকন্ঠী (১৯৫৭)
গল্পমালা
  • রাজা উজির
  • ধূপছায়া
  • বেচে থাক সর্দি-কাশি
  • পুনশ্চ
  • পাদটীকা
  • তীর্থহীনা
  • কর্ণেল
  • রাক্ষসী
  • বিধবা বিবাহ
  • ক্যাফে-দে-জেনি
  • মা জননী
  • বেল তুলে দু-দু'বার
  • স্বয়ংবরা
  • রস-গোল্লা (ইংরেজি)
পুরস্কার
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নরসিং দাস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আনন্দ পুরস্কার প্রদান করা হয়। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।[৫]
মৃত্যু
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার পিজি হাসপাতালের ১২৭ নং কক্ষে সৈয়দ মুজতবা আলী মৃত্যুবরণ করেন।