বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি
বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৭২ এর মাধ্যমে
ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর
কার্য নির্বাহী প্রধান ‘গভর্নর’ হিসাবে আখ্যায়িত। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রেগুলেটরি সংস্থা
এবং কার্যতঃ ‘ব্যাংকসমূহের ব্যাংক’। রাষ্ট্রের পক্ষে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে
থাকে। দেশের মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিরূপিত হয়। এটি দেশের বৈদেশিক
মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে। এছাড়া এটি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশী
টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে। ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকার কাগুজে নোট ব্যতীত সকল কাগুজে নোট মুদ্রণ এবং বাজারে
প্রবর্তন এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া এটি সরকারের কোষাগারের দায়িত্বও
পালন করে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলীসমূহঃ
-আর্থিক এবং ক্রেডিট নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন।
-ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রণ ও
তত্ত্বাবধান, দেশীয় আর্থিক বাজারের প্রসারর ও
উন্নয়ন।
-দেশের আন্তর্জাতিক রিজার্ভেশন ব্যবস্থাপনা।
-মুদ্রা নোট ইস্যু।
-পেমেন্ট সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান।
-মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ।
-ক্রেডিট তথ্য সংগ্রহ করা।
-ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট বাস্তবায়ন।
-আমানত বীমা প্রকল্প পরিচালনা।
ইতিহাস
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায়
অবস্থিত স্টেট ব্যাংক
অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নাম
দিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক
আধ্যাদেশ ১৯৭২ পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে
কার্যকর বলে ঘোষনা করা হয়।
১৯৭১ সালে
মুজিব সরকার সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার আদলে অর্থনীতিকে গড়ে তোলার লক্ষে এবং
যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নার্থে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহের উদ্দেশ্যে সকল
ব্যাংককে জাতীয়করন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
১৯৮২ সালে
বাংলাদেশ সরকার ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংককে বিজাতীয়করন করে এবং বেসরকারী ব্যাংক
প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। ব্যাংকিং খাতকে পূনর্গঠন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রন এবং বেসরকারী
পর্যায়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রনের লক্ষে ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল
কমিশন অন মানি, ব্যাংকিং এন্ড ক্রেডিট নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। এর পরেও ব্যাংকিং খাত দক্ষ ও কার্যকর
হয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি।
বোর্ড
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর
সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনা ৯ জন ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত একটি বোর্ডের ওপর
অর্পিত আছে। বোর্ডে গভর্নর, একজন ডেপুটি গভর্নর, তিন জন উচচ পদস্থ সরকারি
কর্মকর্তা এবং চার জন এমন ব্যক্তি থাকেন যারা ব্যাংকিং, বাণিজ্য,
ব্যবসায়, শিল্প অথবা কৃষি খাতে যথেষ্ট
অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন গভর্নর নিজেই।
বোর্ডের সবাই সরকার দ্বারা নির্বাচিত হন। এই বোর্ডের সভা প্রতি ছয় মাসে কমপক্ষে
একবার অথবা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার বসে। সরকার দ্বারা অনুমোদিত গভর্নর বোর্ডের পক্ষে,
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কাজের
দিক নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন।
গভর্নর
মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের
প্রধান নির্বাহীকে বলা হয় গভর্নর। এ পর্যন্ত ১১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংকের
বর্তমান (১১ তম) গভর্নর হলেন ফজলে কবির।
সমালোচনা
স্বর্ণ সংরক্ষণে ব্যর্থতা
২০১৮ এর জুলাইতে
প্রথম আলোতে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে অনিয়ম
পাওয়া গিয়েছে- এমনটা দাবী করা হয়। সে প্রতিবেদন অনুসারে; শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর দৈবচয়নের ভিত্তিতে করা অনুসন্ধানী
পরীক্ষায় এই অনিয়ম ধরা পরে। এই অনিয়মের প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা
হয়; সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা
ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনের প্রথম তথ্যসুত্রে উল্লেখ করা হয়েছে;
কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তার কথা। তার সোনার একটি গোল চাকতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। যার ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা এই মর্মে
প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়,
তার মাত্র ৪০ শতাংশের কাছাকাছি সোনা। এরপর সেদিন বিকালে সংবাদ
সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন দাবী করেন, স্বর্ণের হিসাবে কোনো হেরফের হয় নি, বরং স্বর্ণকারের
বাংলা ৪ ও ইংরেজি ৮ এর মধ্যকার সমস্যা থাকায় এই বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। এছাড়াও
৯৬৩ কেজি সংক্রান্ত সোনা সংক্রান্ত যে চিঠি শুল্ক বিভাগ দিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিউত্তরে আণবিক শক্তি কমিশন দ্বারা এই স্বর্ণ
পুনরায় মাপার আহ্বান করে। ব্যাংক নির্বাহী পরিচালকের মতে, যে মানদন্ড শুল্ক বিভাগ ব্যবহার করেছে, তা
তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।